কানাইঘাট, (সিলেট) ০৪ মে : মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দক্ষ ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই লক্ষ্য অর্জনে সমাজে আমাদের সকলের দায় আছে। পরষ্পর সহযোগিতায় আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উপযোগী একটি দক্ষ ও মননশীল মেধাবী প্রজন্ম তৈরীতে সকলকে কাজ করতে হবে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হওয়া উচিত তার শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। আর সেই জ্ঞান সৃষ্টিতে দিকনির্দেশনা দিবেন শিক্ষকরা। আদর্শ শিক্ষকই আদর্শ শিক্ষার্থী তৈরী করেন। আমাদের দেশে জিপিএ ৫ বাড়ছে। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়ছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মেধাবীরা শিক্ষকতার পেশায় আসছেন না। শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকরা হলেন অনুকরনীয় বা রোল মডেল। সাম্প্রতিককালে আমরা সেটা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।” আজ ৪ মে বৃহস্পতিবার কানাইঘাট উপজেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ বীরদল এন এম একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মো. জার উল্লাহর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। বিদায়ী শিক্ষক মো. জার উল্লাহকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক আরও বলেন, “জীবনে সকল শিক্ষকের মতোই তিনি সামান্য প্রাপ্তির বিপরীতে অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন। মমতার বাধন ও সোহাগ ভরা স্বপ্নচারী শাসন দিয়ে শিক্ষকতাকে নতুন মানদণ্ডে উন্নীত করেছেন। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বিশ্বাস করি, শিক্ষকতা কোনো পেশা নয়; বরং ব্রত। আর এ ব্রতকে ধারন করে মোঃ জার উল্লাহ একজন সফল মানুষ; কৃর্তিমান ব্যক্তিত্ব।” ধর্মীয় মূল্যবোধের শ্রদ্ধা ও অসাম্প্রদায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত কানাইঘাট তথা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশে-পাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আলেম-উলামাসহ এতদঞ্চলের কৃতিসন্তানদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন এই বরণ্য শিক্ষাবিদ।
সকাল সাড়ে দশটায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় কানাইঘাট সরকারি কলেজ ও কানাইঘাট মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কানাইঘাট উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিসেস খাদিজা বেগম, ৬ সং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আফসার উদ্দিন চৌধুরী, আজীবন দাতা সদস্য জনাব রফিকুল হক, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মিহির কান্তি চৌধুরী। জাতীয় সংগীতের পর পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক জনাব মাহবুবুল হক। বক্তব্য রাখেন মোঃ শাহাবুদ্দিন, দিলদার হোসেন, প্রদীপ কুমার চন্দ, রুহুল আমিন, মুহিবুর রহমান মানিক, মুহিবুর রহমান মনির, মনিরুল হক, ফয়সল আহমদ, শফিউল আলম, ফয়জুল ইসলাম, একলাছ এলাহী, মামুন আহমদ, প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে স্কুলের জিপিএ ৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট ও ক সংবর্ধনা উপলক্ষ্যে ‘স্মৃতির ক্যানভাস’ শীর্ষক একটি স্মরণিকাও প্রকাশিত হয়। প্রধান অতিথি মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক সংবর্ধিত শিক্ষকের হাতে বিদ্যালয় ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্মাননা স্মারক, উপহার সামগ্রী ও নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। উক্ত অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজনকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। বিদায়ী শিক্ষক ও প্রধান অতিথিকে নিয়ে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা স্লোগান সহকারে মিছিলের মাধ্যমে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে আসেন। কানাইঘাট ছাড়াও সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবকগন এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
উল্লেখ্য, সংবর্ধিত শিক্ষক মোঃ জার উল্লাহ কানাইঘাটের একটি স্কুলে ১৬ বছর ও বীরদল এন এম একাডেমীতে প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে একটানা ২৫ বছরসহ ৪১ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি স্কাউটসহ সহ শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাঁর প্রতিষ্ঠানসহ পূরো কানাইঘাটের শিক্ষাকে এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যান। তাঁর অনেক ছাত্র-ছাত্রী দেশ-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan